অসৎ প্রেম বা এশকে - মাজাযী থেকে বাঁচার ছয়টি ইসলামিক উপায় | Six Islamic Ways to Avoid dishonest Love or Eshke-Majazi

যারা এশকে-মাজাযী বা অসৎ প্রেম (পুরুষে-পুরুষে কিংবা নারী-পুরুষে পার্থিব ভালোবাসায়) আক্রান্ত আছে এবং এর ফাঁদ থেকে বের হতে চাচ্ছেন কিন্তু বের হতে পারছেন না, তারা যদি এই ছয়টি কাজ করে তাহলে, ইনশাআল্লাহ তারা এ থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে।

অসৎ প্রেম বা এশকে - মাজাযী থেকে বাঁচার ছয়টি ইসলামিক উপায়  |  Six Islamic Ways to Avoid dishonest Love or Eshke-Majazi
অসৎ প্রেম
৬টি কাজ :
১. আল্লাহপাক যে 'হিম্মত' দান করেছেন তাকে কাজে লাগাবেন। (এখানে হিম্মত অর্থ, নেক কাজ করার বা বদকাজ ত্যাগের দৃঢ় ইচ্ছা করা, আন্তরিক চেষ্টা করা বা দৃঢ় মনে সচেষ্ট হওয়ার ক্ষমতা।)

২. নিজে আল্লাহ পাকের নিকট 'হিম্মতের' জন্য দোয়া করবেন।

৩. আল্লাহর খাস বান্দাদের দ্বারা, বিশেষতঃ নিজের দ্বীনী মুরুব্বী বা উপদেশদাতার (মোর্শেদ বা এছ্লাহী মুরুব্বীর) যারা 'হিম্মত' দানের জন্য দোয়া করাবেন।

৪. নিয়মিত আল্লাহ জিকির করবে, এ বিষয়ে খুব যত্নশীল হবে।

৫. যে সব বস্তু বা যেসব কাজ পাপের দিকে নিয়ে যায়, পাপের ঐসব পথ বা উপকরণ হতে দূরে থাকবে। অর্থাৎ, সকল সুশ্রী-ছূরত হতে অন্তরকেও মুক্ত রাখবে, দেহ এবং অঙ্গ-প্রত্যঙ্গেকেও দূরে রাখবে।

৬. কোন আল্লাহওয়ালা বুজুর্গের সোহবতে (সংস্পর্শে) আসা-যাওয়া রাখবে এবং তার সাথে 'এছ্লাহী সম্পর্ক' কায়েম করবে। 
(কোন খাঁটি বুজুর্গ ব্যক্তির নিকট নিজের ইবাদত-বন্দেগী, আচার-ব্যবহার, চারিত্রিক বিষয়ে প্রভৃতির ভালো-মন্দ, দোষ-অদোষ সব কিছু প্রকাশ করে তার হেদায়াত, পরামর্শ বা উপদেশ মোতাবেক চলার নাম 'এছ্লাহী সম্পর্ক' কায়েম করা। এজন্য প্রথমতঃ ঐ বুযুর্গের নিকট এ বিষয়টি উল্লেখ করে অনুমতি চেয়ে তার সম্মতি পেয়ে গেলেই এছ্লাহী সম্পর্ক কায়েম হয়ে গেল। অতঃপর তাকে অবস্থাদি জানাবে ও তার পরামর্শাদি মেনে চলবে তবেই ইনশাআল্লাহ সাফল্য লাভ হবে।)

নারীর ফিতনা থেকে দূরে থাকার জন্য আপনি নবী 'হযরত ইউসুফ (আঃ)' এর মত দুআ করবেন :

رَبِّ السِّجْنُ أَحَبُّ إِلَيَّ مِمَّا يَدْعُونَنِي إِلَيْهِ ۖ وَإِلَّا تَصْرِفْ عَنِّي كَيْدَهُنَّ أَصْبُ إِلَيْهِنَّ وَأَكُن مِّنَ الْجَاهِلِينَ
অর্থাৎ, হে পরোয়ারদেগার! ওরা আমাকে যে বিষয়ের দিকে আহ্বান করছে, তা অপেক্ষা কারাগার আমার নিকট অধিক প্রিয়। তুমি যদি আমাকে ওদের ছলনা হতে রক্ষা না কর, তবে আমি ওদের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে পড়ব এবং অজ্ঞ মানুষদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। (সূরা: ইউসুফ-৩৩)

মন হল পরিবর্তনশীল। যা আল্লাহর দুই আঙ্গুলের মাঝে। তিনি মানুষের মন ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে থাকেন। অতএব, এই দুয়া বেশি বেশি করবেন :

يَا مُقَلِّبَ الْقُلُوبِ ثَبِّتْ قَلْبِي عَلَى دِينِكَ
অর্থাৎ, হে মনের গতি পরিবর্তনকারী! আমার মনকে তোমার দ্বীনের উপর স্থির রাখ।

সারসংক্ষেপ : 
মোটকথা, যত খারাপ অবস্থায় হোক না কেন, অথবা অন্তরে যত খারাপ খেয়াল, খারাপ কামনাই পয়দা হোক না কেন, মোটেই নিরাশ হবেন না। আসলে মহব্বতের এই শক্তিটা বড় মূল্যবান সম্পদ, যদি এর সদ্ব্যবহার করা হয়। 
যে ইঞ্জিনে পেট্রোল বেশি থাকে তা জাহাজকে সেরূপ প্রচন্ড গতিতে ঊর্দ্বে উড়িয়ে নিয়ে যায়। তবে শর্ত এই যে, তার গতি সঠিক লক্ষমুখী করে নিতে হবে। 

যদি ওই জাহাজকে কা'বামুখী করে দেওয়া হয় তবে কয়েক মিনিটের মধ্যেই তা আপনাকে কা'বায় পৌঁছে দেবে। 
আর যদি তাকে মন্দিরমুখী করে দেওয়া হয় তাহলে আপনাকে অনুরূপ দ্রুতগতিতেই মন্দিরে পৌঁছে দেবে। এশক ও মহব্বতের শক্তি হচ্ছে পেট্রোল।

যদি কোন ওলিআল্লাহর সোহবতে ও বেশি বেশি আল্লাহর যিকিরের দ্বারা একে (এশক ,মহব্বত, অন্তর) লক্ষ্যগামী করে দেওয়া হয় তবে এই ধরনের লোকেরা এত বেশি দ্রুতগতিতে আল্লাহর রাস্তায় অতিক্রম করে যে, মহব্বতহীন লোকেরা বহু বহু বছরের মেহনত ও সাধনার দ্বারাও সেই পর্যন্ত পৌঁছাতে পারেনা। 

তাই দেখা গেছে যে, কোন কোন শরাবখোর ও বিপথগামী প্রেমিক আল্লাহর পথে এসেছে এবং কলিজা পোড়া এক 'আহ' বেরুতেই সে আল্লাহ পর্যন্ত পৌঁছে গেছে। আল্লাহকে পেয়ে গেছে। যত প্রচন্ড বেগে সে পার্থিব অন্যায় ভালোবাসায় দিকে ছুটে চলেছিল, ঠিক অনুরূপ প্রচন্ড গতিতে সে আল্লাহর দিকে উড়ে গেছে। 

তার প্রাণের বেদনা, জ্বালাময় দীর্ঘনিঃশ্বাস, কান্নাকাটি, অনুতাপ-অনুশোচনা, হৃদয়ের বিষণ্নতা, বিদীর্ণতা, কোন খোদাপ্রেমিক ওলির প্রতি তার প্রেমাসক্তি, প্রাণ কোরবান ও আত্মোসর্গ করণ এক পলকে-এক মুহূর্তকালের মধ্যে তাকে জমিন হতে তুলে নিয়ে আরশে পৌঁছে দিয়েছে।

এই সম্পর্কে একটি ছন্দ
আগে লোকটার ভালোবাসা ও উঠাবসা ছিল সুশ্রীমুখ দের সাথে। আর এখন তার ভালোবাসা উঠা-বসা ও মেলামেশা আল্লাহর ওলীদের সাথে। অতএব, তোমরা কেহ তাকে ঘৃণা করোনা, হেয় মনে করোনা। কারণ, সে তো এখন আল্লাহর সাথে সম্পর্ক রাখে।


পরবর্তী পোস্ট পূর্ববর্তী পোস্ট
মন্তব্য নেই
মন্তব্য যোগ করুন
comment url