বুকে ব্যথা বা অ্যানজাইনা কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার | Chest Pain or Angina Causes, Symptoms, Remedies
বুকে ব্যথা অনেক ধরনের হয়। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল হৃৎপিণ্ডজনিত বুকে ব্যথা। কোন কারনে করোনারি ধমনীর (coronary artery) দ্বারা হৃৎপিন্ডের মাংস পেশিতে রক্ত সরবরাহ কমে গেলে বা সরবরাহের তুলনায় চাহিদা বেড়ে গেলে এক ধরনের ব্যথা অনুভব হয়। এই ধরনের বুকের ব্যথাকে অ্যানজাইনা বা অ্যানজাইনা পেকটোরিস (Angina pectoris; Lt. angere = কষ্ট + pectoris = (বুক) বলে। অ্যানজাইনাকে হার্ট অ্যাটাকের পূর্বাবস্থা মনে করা হয়।
কারণ :
করোনারি ধমনীর ভেতরে উচ্চ মাত্রার কোলেস্টেরল জমে ধমনির অভ্যন্তরে গহবর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হৃৎপেশিতে O2 ও পুষ্টি পদার্থ (গ্লূুকোজ) সরবরাহ বন্ধ হয়ে থাকে। কিন্তু হৃদপেশিগুলোকে দেহে অবিরাম রক্ত সরবরাহের জন্য কার্যক্ষম থাকতে হয়। তখন হৃদপেশিগুলো বিকল্প পথ ধরে অবাত শ্বসন প্রক্রিয়ায় পাইরুভিক এসিড থেকে শক্তি উৎপন্ন করে। এই সময় উপজাত পদার্থ হিসেবে ল্যাকটিক এসিড উৎপন্ন হয় যা হৃৎপেশিতে জমা হয় । ফলে বুকে ব্যথা অনুভব হয়।
সাধারণত যেকোনো ধরনের পরিশ্রম বা ভারী কাজ করলে বা সিঁড়িতে ওঠানামার মতো পরিশ্রম করলে বুকে ব্যথা অনুভব হয়। যারা ধূমপায়ী, যাদের বেশি মাত্রায় ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপ আছে, তারাই মূলত অ্যানজাইনায় আক্রান্ত হয়।
১. রোগী বুকের ব্যথায় অস্থির হয়ে পড়ে, বিশেষত স্টার্নামের পেছনে চাপ সৃষ্টি হয়।
২. বুক ভারি ভারী লাগে, সমগ্র বুক জুড়ে মোচড়ানো ব্যথা অনুভব হয় এবং একই সঙ্গে ঘাম ঝরতে থাকে।
৩. এই ব্যথা বুকের বাম বা ডান যে কোন পাশে হতে পারে। ব্যথা ৫-৩০ মিনিট স্থায়ী হয়। বিশ্রাম নিলে ব্যথা আস্তে আস্তে কমে যায়।
৪. বমি বমি ভাব দেখা দেয় অথবা বমি হয়।
৫. পেটে প্রচন্ড গ্যাস অনুভব হয় ও জ্বালাপোড়া, শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।
৬. ক্লান্তি বোধ হয়, মাথা ঘুরে এবং অনেক সময় রোগী অজ্ঞান হয়ে পড়ে।
প্রতিকার :
বুকে ব্যথা হলে দেরি না করে রোগীকে দ্রুত ডাক্তারের কাছে যাওয়া উচিত। অনেক সময় হৃদরোগের ব্যথাকে গ্যাস্ট্রিকের ব্যথা মনে করে ডাক্তারের কাছে যেতে দেরি করেন, যা মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বুকে ব্যথা হলে অবশ্যই কার্ডিওলজিস্টের কাছে যেতে হবে এবং ECG ও ইকোকার্ডিওগ্রামের এর মাধ্যমে ব্যথার কারণ শনাক্ত করতে হবে। উপযুক্ত চিকিৎসা এবং সমস্যার প্রতি যথাযথ মনোযোগ দিলে অ্যানজাইনা নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব।
বিশ্রাম নিলে বা জিহ্ববার নিচে গ্লিসারাইল ট্রাইনাইট্রেট (GTN) স্প্রে করলে বা ওষুধ খেলে ব্যথা কমে। এই ধরনের ওষুধের ফলে করোনারি ধমনীর প্রসারণ ঘটে এবং রক্ত স্বাভাবিক হয়। এছাড়া ধূমপান বর্জন করা উচিত।
প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করা, শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখা, চর্বিযুক্ত খাবার পরিহার করা, উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিস রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখলে অ্যানজাইনার সম্ভাবনা কমে যায়।